১লা জানুয়ারী ২০১৯
সম্পাদকীয় কলমে...
দেখতে দেখতে আরও একটি বৎসর চলে গেল। নতুন কিছুই হল'না এদেশে। আরও কিছু কৃষক আত্মহত্যা করল। ধর্ষিত হল আরও কিছু নারী। পত্রিকায় ছাপা হল তাদের ছবি। আরও কিছু প্রেমিক বিশ্বাস ভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে সিগারেট ধরাল প্রকাশ্য রাস্তায়।
স্ট্যাচু অব ইউনিটি মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো, নর্মদা নদীর তীরে। আর সেই নদীর জলে ভেসে আসলো আরও কিছু গৃহবধূর গুম হয়ে যাওয়া লাশ।
এই লোপাট হয়ে যাওয়া দেশে,এই পঙ্খিলতায় মুহ্যমান দেশে হঠাৎ একদিন একদল পাখি উড়ে এল পরিযায়ীর মত। অচেনা,অজানা সেইসব পাখিরা এল বর্ষশেষের শিশিরে ভিজে যাওয়া দু ডানায় উড়াল দিয়ে। কিছু গান,কিছু কলতান শোনাবে বলে, নতুন কিছু শোনাবে বলে।আসুন তাঁদের বরণ করে নেই।।
- এই সংখ্যার অচিন পাখিরা- রসিক সুজন, আবদুল্লা রহমান মিঠুন, ইন্দ্রাণী কর্মকার, মহাদেব বর্মন, ব্রততী রায় পাটোয়ারী, প্রবীর বরণ সরকার, অজয় গায়েন, নন্দিতা রায়, সাবিউল ইসলাম, ব্রততী সিংহ, কনক রায়, মমতা রায়, আসলাম হোসেন, সুদীপ্ত রায়, বিকাশ নার্জিনারী, মমিদুল মিঞা এবং প্রচ্ছদশিল্পী- মৌমিতা পাল।।
বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির দুই দিক্পাল ...কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের হঠাত প্রয়াণে অচিন পাখিরা গভীরভাবে শোকাহত।।
- প্রথম পর্যায়ঃ- কবিতা
কাঙালিনী
-ব্রততী রায় পাটোয়ারী
-বাবু! ও
বাবু! দুটো টাকা দেন
কাল থেকে
খাইনি কিছু!
-ভাগ মাগী, রাস্তা থেকে সরে দাঁড়া
নোংরা কাপড়ে
ছুঁবি না আমায়
দেখছিস না
গঙ্গা স্নানে যাচ্ছি!
-গঙ্গা স্নান, মা গঙ্গার দর্শন!
সে সব
শুনেছিলাম ছোটবেলায়
সেই কোন কালে
বয়স যখন
ছয়-সাত,
বাপের ঘাড়ে
চেপে সেই প্রথম
গঙ্গা দর্শন!
বাপ বলত, গঙ্গা স্নানে শুদ্ধি হয়,
রোগ-বালাই
সেরে যায়।
-বাবু ও বাবু
দুটো টাকা দেনা
মা গঙ্গার
দর্শন করে
মনের আর্জি জানাব।
লালুকে
সারিয়ে তুলব,
সোয়ামিকে
ফেরত পাবো,
হাতের নোয়া
সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হবে
দেনা বাবু
দুটো টাকা।
-ভাগ মাগী, বেশ্যার আবার মা গঙ্গা!
হায় রে
নারী! পেটে ভাত নেই
ইজ্জত ঢাকার
কাপড় নেই,
তবুও
নোয়া
সিঁদুরের কাঙাল কেন তুই?
----**-----
ধূসর চাঁদোয়া
–সুদীপ্ত
রায়
প্রকৃতির আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে ;
রূপোর নূপুর হয়ে ।
রাতের কুয়াশা ইশারা দেয় -
প্রভাত শিশির রুপে ।
স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছ
যেসব -নতুন কিশলয়
লাগছে আজ বড্ড ঝাপসা
জগতের মায়াবী নেশায় ।
কুয়াশার চাঁদোয়া আজ
চারিপাশে -
পুরু; কেবলই পুরু ।।
----**----
পরিবর্তন -নন্দিতা রায়
শুধু বারবার মনে প্রশ্ন জাগে-
এত দ্রুত পালটে যাবে
সমাজ, পরিবেশ,
সম্পর্ক- মানুষের মন!
আজ বেশ যেন মনে হয়-
চির পরিচিত চেনাপথ
রঙ পালটে নিয়েছে;
চেনা মুখগুলোর অবয়ব
পালটে গেছে।
পরিচিত মুখ, কণ্ঠস্বরে
আজ আর আবেগ নেই;
ঘরের দেওয়ালগুলিও আজ বিবর্ণ হয়ে
শুধু কর্তব্যে পাহারা দেয়;
বিশ্বাসের সম্পর্কে ভিত নাড়িয়ে
উঁকি দেয়
গ্লানি, ঈর্ষা আর সন্দেহ।
তবুও সমাজ এগিয়ে চলছে পরিবর্তনে
হৃদয়ের আর্তিকে উপেক্ষা করে
বাস্তবের কঠিন সংগ্রামে বিক্রি
হয়েছে
ন্যায়-নীতি,
আদর্শ, শিক্ষা- সম্মান-
জীবনের সব অমূল্য সম্পদ!
----**----
বিবেক
-সাবিউল ইসলাম
চোখ দুটো আজও ছল ছল
হৃদয় আজও উদ্বেলিত
মানবতার বেড়াজাল আজ প্রায় ভঙ্গু!
দু'চারটে শেয়াল-কুকুর আজও তাড়া করে,
শুধু হাড়ের বাহার।
নিষ্পেষিত; নিপীড়িত আজও সমাজ।
সময়ের তাড়না আজ মানুষকে ব্যস্ত করে না।
উদ্বেলিত সমাজে মানবতার কাছে
বিবেক হেরে গেছে।
অন্ধ সমাজে মানবতার পরাজয়,
তাই রাজত্ব আজ শেয়াল-কুকুরের
অস্তিত্ব শুধু হাড়ের।।
----**----
নিরুদ্দেশ শব্দ
-ইন্দ্রাণী কর্মকার
বেশ কিছদিন.......
শব্দের সাথে শব্দের সমীকরণ ঘটেনি।
বল পেনের নীল কালো সবুজ জমাট কালি,
আঁচড় কাটেনি কল্পনার ক্যানভাসে।
সাদা ডায়ারির পাতা আজও প্রতীক্ষায়-
একটু ভালোবাসার
বেলা শেষে, কল্পনা বাসা বাঁধে ব্যালকনির পাশের ছোট্ট ডাস্টবিন এ.....
নিরুদ্দেশ শব্দ বন্ধ রাখে স্বপ্ন আঁকা।
অনুভূতির অধিগ্রহণ
আশার কৃষ্ণগহ্বর এ।।
----**----
- দ্বিতীয় পর্যায়ঃ- গল্প
রাজবংশী ভাষার গল্প “আশুরবাদ”
– কনক রায়
মনটাত কত কি চিন্তা ভাবনা যে, আইসে আর যায়- তাঁর ঠিক ঠিকানা নাই। কুন কুন চিন্তা ভাবনা ভালে ভাবায়। বিনুর মনটাত কত চিন্তা আইসে আর যায়।
একদিন বিনু উয়ার দিদির বাড়ি থাকি ফিরতে ফিরতে কোনেক ভালে আতি হয়্যা গেইছে। আসিবার পথত একখান হাফওয়ালত গাথা একহাত শিবের ফটক দেখির পাইল । এগল্যা দেখিয়া বিনু ভাবিছে আতি হইলে বোধায় বাড়িরগড়ের কাও কাও আসিয়া সইন্ধ্যাবাতি দিয়া যায়, ওটে একটা ধূপদানীও দেখা যায়। লাইটের একটা ব্যবস্থাও করিয়া দিছে ওঠেকার লোকগুলা।
বিনু ভাবে যে, লোকগুলা বোধায় মাঝে মাঝে ভাবে ক্যামন করিয়া ঠাকুরের ঘরটা আরও বড়ো করা যায়। কিন্তু অল্পখানিক পরে ভাবে ঠাকুর যদি দয়া না করে হামরা আর কত করিমো। তামান তো তোমরায় করেন হামরা খালি উপলক্ষ মাত্র।
বিনুর ঠাকুরটাক দেখিয়া খানেক মায়া হইল। বিনু পকেটত হাস্তাইলেক, একটা পাঁচটাকি ডলার পায়্যা ঠাকুরটার গোরত যায়্যা কইল- হ্যাঁ, মুই পাঁচটাকা দিনু। অন্য মাইনসিগুলারঠে যা পাইস নিয়া ঘরটাক খানিক ঠিক করিস। না হইলে বাইস্যালির দিনত খালি জল আর ঠাণ্ডার দিনত খালি হাওয়া খায়্যা থাকবু। আর কাকো পাইলে স্বপন-টপন দেখাইস, না হইলে হবার না হয়। স্বপন না দেখাইলে তোর উপরা মাইনসিগুলার ভয়-ভক্তি চাপিবে কেমন করি। তুই তো জানিস মাইনসিগুলা বিপদত না পড়িলে তোমারগুলার কথা উমারগুলার ফমে না হয়। খালি হাতটা ওঠেয়া চুপ করি থাকিলে হইবে না।
বিনু আরও কইল, বড়ো বড়ো ঠাকুরের থানগুলা তো ঐমতন করিয়ায় হইছে। মাইনসিগুলাক কিছু না দিলে তোক কি মাইনসিগুলা কিছু দিবে রে? এলা যে আরও রাজনীতি চইলছে! তাতে মাইনসিল্যা আরও বেশি চালাক হয়্যা গেইছে। উমরা বুঝির পাইছে তোমার আর আগের মতন শক্তি নাই। সেই জইন্যে উমরাও তোমারগুলার উপর ভরসা ছাড়ি দিয়া ন্যাতাগুলার পাছ ধরিছে। তায় তুই থাক। মোর আতি হয়্যা গেইছে, বাড়ি যাবার নাগে। মুই গেনু।
খানিক ভাবি দেখিস। না হইলে খালি থানটাত হাতটা ওঠেয়ায় থাকবু- আশুরবাদ করিবার লোক পাবু না।।
----**----
আমি এবং অনুপমা
-আবদুল্লা রহমান মিঠুন
আমি বেশ কিছু
দিন ধরেই কলকাতা যাব যাব করছি । এতটা পথ একা
যাব ! এর আগে সেই কবে একবার গেছিলাম কলকাতা ।তখনকার কলকাতার আজকের মতো জৌলুস না
থাকলেও ক্লাসিক ভাব ছিল ।আমি ঠিক করলাম আর কোথাও তো গেলাম না বাংলার বাইরে কলকাতার
রহস্য
ভেদ করে অন্তত বাঙালি হিসেবে আমি বলতে পারবো
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ।"আসলে কলকাতা যে বাংলার মুখ না এটা আমার মতো
দাম্ভিক কে বোঝাবে ?
আমি উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে চাপলাম । এই
তিনটে নাগাদ । একজন সাধারণ যাত্রী হিসেবে জেনারেল কামরায়। আমি বড়ো বিরক্ত
হচ্ছিলাম।আর কতদিন হেরো কমিউনিস্টের ঠাট বজায় রাখবো ।আমার মতো বয়স হবে কিংবা
একটু কম বাবু গোছের এক ভদ্রলোক আনন্দবাজারে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন । আমি ভাব ছিলাম
এবার আর একবার সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়বো মাঠে । এভাবে চলতে পারে না । সারাটা
জীবন পার্টিকেই দিলাম ।এবার শেষ লড়াই । হয় ওরা নইলে আমরা ।এই সব সাতপাঁচ উদ্ভট
চিন্তা পাক খাচ্ছিল মাথায় । এমন সময় সেই ভদ্রলোক আমার দিকে ভালো করে চাইলেন,আমিও চাইলাম তার চোখের দিকে শুভ দৃষ্টি
হয়ে গেল । লোকটা আমার কাছে এসে বসল । তারপর একটা গান ধরলো "আমার সুরের সাথী
আয় রে ।" বুঝতে বাকি রইল না । কে এই বাবু ! আমারই বন্ধু কমলেশ ত্রিপুরারি ।
গল্প শুরু হলো "সুরের সাথী" দিয়ে । আমি ইতিমধ্যে সিগারেট ধরিয়ে জানালার
কিনারে
চেপে গেছি । অনেকদিন বাদে রাজনীতি,সাহিত্য বাদে কিছু বলতে পারছি ধন্য মনে
হচ্ছে নিজেকে । "সুরের সাথী" বলতে আমরা আমাদের প্রেয়সীকে বোঝাতাম ইউনির্ভাসিটি লাইফে ।আজ ব্লক ডিভিশন অফিসে
জয়েন্ট বিডিও
ত্রিপুরারি ওর প্রেয়সীকে নিয়ে সুখেই আছে ।
আর আমার প্রেয়সী বলতে তেমন কেউ সেদিনও ছিল না আজও নেই । আমার প্রেয়সীর চিন্তা
মাথায় গেঁথে গেল । আসলে এতো চাপে ছিলাম বছর পনেরো সব ভুলে গেছি । নিউ মালদা জংশনে
নেমে গেল ত্রিপুরারি । আরও অনেক কথা বলা হয়েছিল সেগুলো বলার মতো না ।
আমার আরও
অর্ধেক পথ বাকি । আর মাথায় কেবল প্রেয়সী ঘুরপাক খাচ্ছিল । ল্যাপটপটা অন করলাম কারো
পোষ্টার বানানোর কথা মনে পড়ল । কে সে ? কে একদিন আমাকে বলেছিল "তুই আমার ছবি
দিয়ে পোষ্টার বানাবি তাই তো "...অনেকক্ষণ বাদে স্মরণে এলো অনুপমা মুখার্জীর কথা
। এই সেই নারী যে আমার সব চেয়ে কাছের মেয়ে বন্ধু ছিল ।কিন্তু সে কোথায় আর আমি
কোথায় ?
কেউ কারো কোনো খোঁজ রাখে নি পনেরো বছর !
এটা কী সম্ভব ?
এসব আজও কী অনুপমার উপস্থিতি পারে আমার
মতো কম্যুনিস্টের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে ? না না পারবে না । আর আমি এসব ভাবছি কেন ? ছি ছি...
ট্রেন সকাল
সকাল ব্যস্ততম রেল স্টেশনে এসে থমকে গেল । এবার নামতে হবে আমাকে । ডিজিটল
ইন্ডিয়াতে সব কিছু বদলে গেছে শিয়ালদহের । লোকের হইচই, আছে ভিড় আছে কিন্তু কোথাও যেন খামতি আছে
একটা । যান্ত্রিকতার কাছে কার যে অসহায় মুখ আমি দেখতে পাচ্ছি ।টিটি আমাকে দেখছে
আমি সেই করুণ মুখের দিকে চেয়ে । তারপর সে ভিড়ে মিলিয়ে গেল । আমিও ট্যাক্সি চেপে
ঘুরতে বেরোলাম । সারাদিনে ঘোরাঘুরি করে রাতে মামার বাসায় ফিরলাম । মামা রেগে গেছেন
সারাদিনে একবারও জানাইনি আমি এখানে এসেছি । অতিথি সম্পর্কে কিছু বলে মামার হাত
থেকে বাঁচলাম । পরেরদিন আমি কলেজ স্ট্রিটে এসে কিছু বই কেনাকাটা করলাম । আর এখানেই
শ্রীমতি অনুপমা মুখার্জী ব্যানার্জীর সাথে দেখা । একটা বছর পাঁচের ছেলে হাতে করে
নিয়ে এসেছে । আমি কিছু বললাম না "ও" আমাকে কিছু বলল না ।আমি চলে এলাম ।
সন্ধ্যের রেলে চেপে বাড়ি ফিরলাম । মুড অফ । গোটা পথে নির্বাক ছিলাম । বাড়ি ফিরে
কদিনের মধ্যে চিঠি পেলাম...নাম ছিল না কারো কিছু লিখা ছিল যার মূল কথা এই
"কথা বলতে পারতিস । আমি ভালো আছি । নামটা হারিয়ে ফেলেছি । তোর সেই আতঙ্ক আজ
নিজেই আতঙ্কে ভোগে । হৃদয় অবাধ্য মেয়েটা আজ সংসারে চাপে বাধ্য হয়ে গেছে ।"
----**----
- তৃতীয় পর্যায়ঃ- কবিতা
বাবা
-প্রবীর বরণ সরকার
তুমিই মাথার উপরের ছাদ
ছায়া
প্রদানকারী বটগাছ।
তোমার
হাত ধরেই হাটতে চলা শুরু,
তুমিই
জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু।
ঝড় বর্ষাতেও
আগলে রেখে
স্নেহ,মায়া,
মমতাতে করেছ বড়ো,
নিদ্রাহীন
নিশিযাপনে-
প্রতিনিয়ত
গড়ে তুলেছ আমার ভবিষ্যৎ ।
কেন
চলে গেলে একলা করে!
না ফেরার
দেশে!
কে বোলাবে
এখন মাথার উপর হাত?
কে বলবে আমায় ‘ছুটে যা –ছাড়ব না তোর সাথ’
কেন
চলে গেলে একলা করে
না ফেরার
দেশে?
বাবা,
তুমিই ছায়া প্রদানকারী বটগাছ।
বাবা,
সত্যিই তুমি
মাথার
উপরের ছাদ।।
----**----
মিঠে রোদ
-ব্রততী সিংহ
মিঠে রোদ,
শীতের বিকেলের মিঠে রোদ;
সকালের-শীতের শেষে,
বিকেলে তোমার সাথে দেখা।
তোমার মিঠে সোনালি রঙ,
আমার একটু বেশি ভালো লাগা।
তুমি যখন কচি পাতা বেয়ে,
আভা আমায় দাও;
তোমার রঙে আমি রাঙি ,
আমাকে তুমি রাঙাও ।
তোমার সাথে লুকোচুরি খেলা;
সঙ্গী আমি, তুমি নও একলা।
শীত বিকেলের তুমি রাণী
মিঠে রোদ, তোমায় আমি,
বড্ড ভালোবাসি।
----**----
মেঘদূত
-মৌমিতা পাল
যদি কখনও মনে
পড়ে,
বার্তা পাঠাস
আমায়।
একখানি চিঠি
লিখে
ছুড়ে দিস
মেঘের দিকে।
আমাদের
কথোপকথন রইবে অন্তরালে,
জানবে না কেউ
কোনোদিন।
অলক্ষে থাকবো
আমি।
উত্তর পাঠাবো
মেঘের ঠিকানায়
যেমন
পাঠিয়েছিল নির্বাসিত যক্ষ।
আজ তো আমরাও
নির্বাসিত-
বিধাতার অভিশাপে।
আমাদের কথা
না হয় কেবল মেঘদূতই জানুক।
কি হবে তাতে?
এতো আর ভুল
নয়
সমাজের
চক্ষুলোকে।
----**----
নীরার জন্য
- আসলাম হোসেন
আরও একবার ঘুম ভাঙানি
নীল ময়ূরের ডাক,
আরও একবার নীল শরীরে
কালো ভ্রমরের হাত।
আরও একবার সবুজ ঘুমে
জাফরানী এক স্বপ্ন,
আরও একবার বাঁচতে চেয়ে
মরেছি তোমার জন্য
....**....
- চতুর্থ পর্যায়ঃ- গল্প
অচিন পাখি
-মমিদুল মিঞা
দার্জিলিং মেল পৌনে নটায় শিয়ালদায় এসে পৌছাল। প্লাটফর্মের বাইরে পা রাখতেই শুরু হল তীব্র আলোর ঝলকানি, উত্তরের থেকে
সম্পূর্ণ আলাদা।বেশ
গা-জুড়ানো। এত কিছুর মাঝেও মৃদু
মন্দ বাতাসে অমিল পেলাম উত্তরের সাথে। অটো স্ট্যান্ডে জমে উঠেছে ততক্ষণে ব্যাস্ততম
শহরে যাত্রীদের কোলাহল। উঠে পড়লাম অটোতে। অনুভব করলাম, এরা সবাই কত সুন্দর অল্পতেই
সুখি থাকে, কিন্তু আমাদের ওখানে......ঠিক সবই যেন আগের মতই আছে।
অটো চলছে শিয়ালদা ট্রাফিক মোড় ক্রস করে।মাঝে দু একটা জায়গায় যাত্রী নামল,
চলছে যাত্রীর অবিরত ওঠানামা। এসবের মাঝেও একা নামলাম, শেষ সেই বেলেঘাটা বাইপাশে।
অনেকদিন পর হলেও বাইপাশ আমাকে চিনতে পেরেছে। ভেবে আস্বস্ত হলাম, বুঝলাম ট্রাফিক
সিগনালেও।
ডোরাকাটা খোপ গুলো পাড় করে পৌঁছে গেলাম ওপারে।চলেছি চিংরিঘাটার দিকে।
যাদবপুরের ক্যাম্পাস, মিনি বাইপাশ,চা লুচির কারখানা পিছনে ফেলে দ্রুত চলছি। চোখে
পড়ল অর্ধনগ্ন একটি ছেলে এদিকেই ছুটে আসছে। বগলে কিছু কাগজ। থমকে গেলাম। কোথাও
দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায়! টাউনে না জংশনে! মনে পড়ছে না। এগিয়ে চললাম।
হঠাত মনে হল কেউ ডাকছে আমাকে পিছন থেকে। মুখ ফিরিয়ে দেখলাম- সেই ছেলেটিই;
বলছে, “ ও বাবু,বাবু! নিন না একটা কাগজ। অনেকটা বেলা হল কিছু খাইনি। বাবু নিন না একটা পত্রিকা...”
হতভম্ব হয়ে রইলাম। কোট পরা উকিলবাবুটি বললেন “ছাড়ুন মশায় ওসবে কান দেবেন
না, এটা ওদের রোজকার ব্যাবসা।” ব্যাস্ততার ভিড়ে হারিয়ে গিয়েও শুনতে পেলাম “ও বাবু
আপনি শিলিগুড়ি থেকে আসছেন তো!” এগোতে পারলাম না, কানে এলো “একটা কাগজ... আচ্ছা না
হয় ওখানকার একটা পত্রিকাই নিন, খুব অল্প দামে...নিন না বাবু”
রাতের পর আমারও আর খাওয়া হয়নি, পেটের মোচড়টা বুঝতে পারলাম। তাড়াতাড়ি কাগজ
পত্রিকা নিয়ে কোম্পানির মেসে উঠলাম।
রাত অনেক হয়ে গেছে, মনে হল
অবসর সময়ের বিনোদনে মন বসাবো পত্রিকায়। কগজের ভেতর থেকে বের করলাম, কিন্তু এ কি! এ
কোন পত্রিকা! কাগজটা সরিয়ে দেখতে পেলাম বড় বড় অক্ষরে লেখা নাম –“অচিন পাখি” প্রথম
বর্ষ।
....**....
- পঞ্চম পর্যায়ঃ- কবিতা
নিরুপায়
-মমতা রায়
তাদের কি ইচ্ছে করে না - স্বাধীনভাবে বাঁচতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - ব্যাগভর্তি বই নিয়ে স্কুলে যেতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - মাস্টার,
প্রফেসর SDO BDO IPS হতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - দামী দামী জামা পড়তে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - নামী দামী হোটেলে চিকেন বিরিয়ানী পোলাও খেতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - অন্য বাচ্চাদের মত বাবা-মার হাত ধরে আনন্দ মেলাতে যোগ দিতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - পাশ দিয়ে যাওয়া বড়লোক বাবা-মার মত নিজের বাবা-মাকে সাঁজাতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - নরম বিছানায় একটু শান্তির ঘুম দিতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - ব্যান্ডেড গাড়িতে চেপে অন্যদের মতো ঘুরতে?
ইচ্ছে ত করে সবই কিন্তু মনে হয় তাদের জন্মটাই অভিশপ্ত,
তাই তো তাদের জীবন রাস্তা বাসস্ট্যান্ড আর প্লাটফর্মের মধ্যে সমাপ্ত।
তাদের কি অপরাধ ছিল বলতে পার তোমরা?
জন্মের পরের দিন থেকে হাত পেতে করছে শুধু মানুষের কাছে আনাগোনা।
কত গালি - গালাজ খারাপ কথা শুনতে হয় তাদের,
তবুও তার থেমে থাকে না একমুঠো খাবারের জন্যে।
তাদেরকে নিয়ে ভাবার মতো সময় নেই কারো,
উন্নত দেশে নিজেকে উন্নত করতে সবাই তো ব্যস্ত।
আজ আমি নিরুপায় ----
উন্নতশীল দেশে থেকেও দিতে পারি না তাদের ইচ্ছের দাম।
....**....
পঁচিশ টাকার ব্যবসায়ী
-অজয় গায়েন
হাসি পায়, দেখলে আমার মুখোশধারী সভ্যদের...!
কাজ দেওয়ার নাম করে শারীরিক উপত্যকায় আঁচড় মারে,
পেটের জ্বালায় জান চলে যায় মান থাকে তাঁর কিসের জোরে !
উপায় নেই, সভ্যদের পঁচিশ টাকায়,
পেট বাঁচালাম নগ্নতায়...!
সমাজের নেতা তাঁর আবার বড়ই নেতা-
অনেক বেশি আদর চাই,
চাইলে টাকা, বলে তুই তো পঁচিশ টাকার ব্যবসায়ী ভাই।
সভ্যরা বলে পরকীয়া নাকি আইনে চলে।
ফের যখন বাচ্চা এলো, তাঁর দায় কে নিল?
সবাই বলে নুন ঢেলে দে।
আমি বুঝিনা ভাই সমাজের মান
আমি বুঝি পেটের টান।
আমি যে পঁচিশ টাকার ব্যবসায়ী ভাই
আমি শুধু দুবেলা ভাতের ব্যবস্থা চাই।
...**...
বিষাদ
– রসিক সুজন
আমলকীর পাতা খসাড় মতো নিঃশব্দে
বেঁড়েছে মোর বেদনাটুকু
ছাইচাপা আগুনে।
তোমাকে আপন করার আশায়
হাঁটু কাপানো জ্বর
থর- থরনিথর মন।
ছন্দরাশির জপমালা গাঁথিনু শতপড়াতে গলায়,
ছিড়ে গেল তান, বেসুর বাগানফুলহীন মোর মনের আলয়।
চন্দ্র বাড়ির যত রক্তজবাপাতাহীন সব শুকিয়ে কাঠমোর নবমী নিখাদ।
প্রেমিকার লাগি যে কবি
রচিল কবিতা রাশি রাশি
,
সে আজ ভিখারী
অকুল পারাপারে।
নাহি নাহি আর জীবনের স্বাদএ জীবন ভরে,
বিষাদময় আজি এ
জগৎসংসার।
...**...
- ষষ্ঠ পর্যায়ঃ- গল্প
নূপুর
-মহাদেব
বর্মন
অনেক দিন
ধরেই লেখালিখি করি না । বর্তমান এই উন্নত টেকনোলজির যুগে একটা প্রহরও অবসর দেয় না
। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যপ ইউটিউব এখন একটা মুহূর্তের জন্য অখুশি রাখে না। বন্ধুরা
পত্রিকা প্রকাশ করবে তাতে লেখা দিতে হবে হঠাৎ করে কিযে লিখি বুজেই উঠতে পারছিনা আর
কি বিষয় নিয়েই লিখব। বর্তমানে যার ফেসবুক আছে তার তো বন্ধুর অভাব নেই।তবুও দেখি
স্ট্যাটাস অনেকে দেয় মুহূর্তে মধ্যেই বন্ধুরা তার দুঃখকে ভাগ করে নেয়, এতজন ভাগ করে নেয়, যে দেয় শেষে তারই পেতে হয়তো দুঃখ জুটে না।
চলো এত বিনোদনের মাঝেও আপনাদের একজনের প্রেমের কাহিনী শুনাই। রাত 8টা বাজে , এনজেপি স্টেশন থেকে 30 মিনিট পরে ট্রেন ছাড়বে। ঘাড়ে একটি ব্যাগ
আর হাতে একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে অজয় ট্রেনে উঠল কলকাতা যাবে । এই নিয়ে অজয়ের
দ্বিতীয় কোম্পানি তে যোগদান। কোম্পানির দেওয়া রেল টিকিটে অজয়ের আপার লোয়ারে সিট
পড়েছে। আগের কোম্পানির তুলনায় নতুন কোম্পানির পোস্ট ও বেতন দুইটাই ভালো। ট্রলি
ব্যাগ টি নিচের সিটের তলায় রেখে দিয়ে অজয় বসে রইল। কিছুক্ষন পরেই তার লোয়ারের
যাত্রীরা উঠল। অজয় তার আপার সিটে উঠতে যাবে, এমন সময়ে এক যাত্রী বলে উঠল ;আপনি বসতে পারেন কারন এই সিটের যাত্রী এখন
উঠবে না তারা কিষানগঞ্জ স্টেশনে উঠবে। অজয় ঘুমায় রাত বারোটায় , তাই বসে রইল। বাকি যাত্রীদের কথাবার্তা
শুনে অজয়ের মনে হলো তারা দল বেঁধে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে , কিষানগঞ্জ থেকেও তাদের দলের যাত্রী
উঠবে।রাত এগারো টা বাজে এইবার অজয় তার নিজ আপার সিটে গিয়ে উঠল। মোবাইলে ফেসবুকে
স্ট্যাটাস দেখছে,
সারা দিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত শরীর পনে
বারোটা বাজলে ঘুমে তার চোখ সুরু হয়ে আসছে তাই মোবাইলের স্কিন টা অফ করে দিয়ে চোখ
বন্ধ করে রইল। রাত বারোটায় ট্রেন থামল শুনশান কিষানগঞ্জ স্টেশনে। আবছা ঘুমের
মধ্যেই অজয়ের বুজতে অসুবিধা হলো না যে এটাই কিষানগঞ্জ স্টেশন, এই স্টেশন থেকেই তার নিচের লোয়ারের দুইজন
যাত্রী উঠবে। সেই দুইজন যাত্রীর একজনের পায়ের নুপুরের ঝুন ঝুন আর চুরির টংটাং
শব্দে হটাৎ অজয়ের ঘুম ভেঙে গেল। সেই নুপূরের শব্দ ক্ষনিকের মধ্যেই অজয়ের গায়ে
কাঁটা দিয়ে উঠল। কিছু ঘটনা রয়েছে যার আভাস পেলেই গায়ে কাঁটা ফুটে উঠে।তেমনি অজয়ের
জীবনে কিছু ঘটনা রয়েছে যা পায়ের নুপূরের শব্দ পেলেই অজয়ের গায়ে কাঁটা ফুটে উঠে।
কিন্তু আজ এই পায়ের নুপূরের শব্দ তার খুবই চেনা মনে হচ্ছে।নিচ থেকে বার বার
নুপূরের শব্দ কানে আসায় অজয়ের মন কে আবেগতাড়িত করে তুলেছে। নুপূরের ঝুন ঝুন শব্দ
অজয়ের মনে তীব্র হাহুতাশে পরিনিত করছে ,তার চারপাশ থেকে চেনা মানুষ গুলি তাকে যেন
দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তার কানে কানে কেউ এসে যেন বলছে কি অজয় তুমি সুখি নও। তার
স্মৃতি পটে ভেসে উঠছে দুইবছর আগের সেই দিন টার কথা। যে দিনগুলি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা
করে কিন্তু ভুলতে পারেনা । আসলে ভুলতে চাওয়ার ভুলটাই বারে বারে ভুলে যাওয়া
মুহূর্তকে মনে করে দেয়। নুপূরের শব্দে অজয়ের মন কেন এত শূন্যতায় পরিণত হচ্ছে ! কেন
তার মনে হচ্ছে সব কিছু থাকার সত্ত্বেও যেন সব হারিয়ে যাচ্ছে!
আচ্ছা চলো
তোমাদের সেই দিনটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই ।
অজয় তখন
গ্রাজুয়েশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র,খুব কাছের এবং খুব প্রিয় বন্ধু হলো তার
সহপাঠী বর্ণালী। কলেজের প্রথমদিন থেকে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, যতই দিন যায় ততই তাদের বন্ধুত্বের গাঢ়ত্ব
বাড়তে থাকে। পরানো চাল যেমন ভাতে বাড়ে তেমনি তাদের বন্ধুত্ব যতই দিন যায় ততই গাঢ়ত্ব
বাড়তে থাকে। অনেক সফল ও ব্যর্থ প্রেম যেমন বন্ধুত্ব থেকে সৃষ্টি হয় তেমনি অজয় আর
বর্ণালীর বন্ধুত্ব প্রেমের পর্যায়ে কখন যে উত্তীর্ন হয়ে গেছে তারা বুজতেই পারেনি।
ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা অর্থাৎ নিজের থেকে তার হয়ে যাওয়া---কখন যে এই ভালোবাসা
সম্পর্কটা তৈরি হয়ে যায় বুঝা মুশকিল। অজয় যখন বুঝতে পারে বর্ণালী কে ছাড়া কিছুই
ভালো লাগছে না,
পর্নিমার রাতের চাঁদের সৌন্দর্য বর্ণালীকে
ছাড়া পরিপূর্ণতা পায় না। সেদিন আর দেরি না করে অজয় ফোন করে বর্ণালীকে-----বর্ণা ঘর
থেকে বের হয়ে চাঁদকে দেখ একটু আমি জানি আজ পূর্ণিমা অনেক দেখেছি পূর্ণিমার চাঁদ , তার আগে বল কেন তুই আগে বের হ তারপর বলছি
আচ্ছা বের হয়েছি এইবার বল পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কত সুন্দর না হ্যাঁ তা তো সুন্দর
কিন্তু আজ হঠাৎ করে এই প্রশ্ন!বর্ণা আমার কিন্তু ভালো লাগছে না , জানিস কেন?এই যে পূর্ণিমার চাঁদ এত সুন্দর তার
সৌন্দর্য আমি যে অনুভব করছি তা ব্যক্ত করার জন্য এক জন মনের মানুষকে পাশে চাই, যদি ব্যক্তই করতে না পারি তাহলে সেই
সৌন্দর্য এর কোনো মূল্য আছে বাহ: আজ যে এত কবিত্ব কোথায় থেকে তোর কাছে আসল কবিত্ব
নয়রে অভাব ,অভাব টাই আজ বড় করে দেখা দিচ্ছে তর আবার
কিসের অভাব পূর্ণিমার চাঁদকে দেখার জন্যে একজন কে পাশে লাগে সেই পাশে থাকার
মানুষটির অভাব বুঝেছি বাপু প্রেমে পড়েছে তা পাশে কাকে নিয়ে চাঁদ দেখতে চাস
বর্ণালীর কাছ
থেকে এই কথা শুনে অজয় অনেক্ষন ধরে চুপ করে ছিলো ,ফোনের ওপারে বর্ণালীও অধীর আগ্রহে চুপ করে
ছিল অজয় কার নাম বলে। মনে একটা চাপা আশঙ্কা নিয়ে অজয় বলেই ফেলে সে আর কেউ নয়
পূর্ণিমার চাঁদ কে দেখার জন্যে আমি তোমাকে চাই
এই বলে অজয়
বর্ণালীকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দেয়। সেই সময় অজয় দৌড়ে ঘরে এসে
আবেগে বালিশে মুখ চাপা দিয়ে রাখে আর মনে ভিতরে যেন লজ্জা আর আশঙ্কা দৌড়াদৌড়ি করতে
লাগল। অপর দিকে বর্ণালীও যে অজয় কে ভালোবেসে ফেলেছিল, তাই অজয়ের কাছ থেকে তা শুনে হা করে তাকিয়ে
ছিল সেইদিনের পূর্ণিমার চাঁদের দিকে। আর অপেক্ষা করে আছে অজয়ের ফোনের। কিন্তু
এইবার অজয় ফোন করেনি করেছে মেসেজ।কাল কলেজে তোমাকে একটি উপহার দিব যদি তুমি নেও
তাহলে বুঝব হ্যাঁ আর যদি না নেও তাহলে তুমি তুই এর মধ্যেই থাকতে চাও
পরের দিন
কলেজে অজয় একটি জনশূন্য গাছতলায় গিয়ে বর্ণালী কে আর দশজন প্রেমিকের মতো করে নয় সে
এক জোড়া পায়ের নূপুর প্যাক করে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সেই দিন থেকে তাদের
বন্ধুত্বে উপর প্রেমের অলংকার জুড়ে যায়। তারপর থেকে কোনো দিন বর্ণালীকে নূপুরহীন
পায়ে চলতে অজয় দেখেনি...
----**----
- বিশেষ কলমেঃ -
আমরা থাকব- আমরা বাঁচব
-বিকাশ নার্জিনারী
হৃদয় যন্ত্রের পাসওয়ার্ড
কাউকে যদি দিয়ে থাকো
.................................
.................................
দুখী হওয়ার কোন কারণ নেই
পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিবে ।
*************************
মোহ এর সঙ্গে তুমি আড়ি পাত,
যন্ত্রনা তোমায় ছেড়ে চলে যাবে ।
অভ্যাসকে কর তুমি কুড়াঘাত ,
ছোট কিছু হারানোর ভয় তোমায় দেবে-
বড়ো কিছু পাবার সাহসী বার্তা ।
*****************************
আত্মঘাতী সে তো প্রেমের মৃত্যু
কিছু বিষাদঘন স্মৃতি
যা শুধু আপনজনের
জন্য রেখে যাওয়ামাত্র
তাঁদের ভাবনার কল্পনাবল
আর কল্পনাবিলাস
আজ ছিল আশাহীন
অতৃপ্তির শেষ নিশ্বাস
প্রেমের অপার মহিমাময়ী
তাদের জানতেই দিলে না
বর্তমানের
আর্তনাদধ্বনি
আর..........
অতীত-ভবিষ্যৎ
তাদের জন্য দেওয়া ত্যাগ
আপনজনের ভাগ্যোদয়
সব শুনি.... সব শুনি...
আপন জন্যের ভাগ্যশক্তি
এক নিমেষেই কিনারাবিহীন
জলছবি,,,,,
হায়! মানব সহৃদয়া...।।
(চলবে)
----**----
"অচিন পাখিদের লালন করুন; অচিন পাখিদের সঙ্গে থাকুন। বিদ্রোহ-প্রতিবাদ এবং ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকুক বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি।।"
"ধন্যবাদ"
................***................
–সুদীপ্ত
রায়
প্রকৃতির আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে ;
রূপোর নূপুর হয়ে ।
রাতের কুয়াশা ইশারা দেয় -
প্রভাত শিশির রুপে ।
স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছ
যেসব -নতুন কিশলয়
লাগছে আজ বড্ড ঝাপসা
জগতের মায়াবী নেশায় ।
কুয়াশার চাঁদোয়া আজ
চারিপাশে -
পুরু; কেবলই পুরু ।।
শুধু বারবার মনে প্রশ্ন জাগে-
এত দ্রুত পালটে যাবে
সমাজ, পরিবেশ,
সম্পর্ক- মানুষের মন!
আজ বেশ যেন মনে হয়-
চির পরিচিত চেনাপথ
রঙ পালটে নিয়েছে;
চেনা মুখগুলোর অবয়ব
পালটে গেছে।
পরিচিত মুখ, কণ্ঠস্বরে
আজ আর আবেগ নেই;
ঘরের দেওয়ালগুলিও আজ বিবর্ণ হয়ে
শুধু কর্তব্যে পাহারা দেয়;
বিশ্বাসের সম্পর্কে ভিত নাড়িয়ে
উঁকি দেয়
গ্লানি, ঈর্ষা আর সন্দেহ।
তবুও সমাজ এগিয়ে চলছে পরিবর্তনে
হৃদয়ের আর্তিকে উপেক্ষা করে
বাস্তবের কঠিন সংগ্রামে বিক্রি
হয়েছে
ন্যায়-নীতি,
আদর্শ, শিক্ষা- সম্মান-
জীবনের সব অমূল্য সম্পদ!
----**----
চোখ দুটো আজও ছল ছল
হৃদয় আজও উদ্বেলিত
মানবতার বেড়াজাল আজ প্রায় ভঙ্গু!
দু'চারটে শেয়াল-কুকুর আজও তাড়া করে,
শুধু হাড়ের বাহার।
নিষ্পেষিত; নিপীড়িত আজও সমাজ।
সময়ের তাড়না আজ মানুষকে ব্যস্ত করে না।
উদ্বেলিত সমাজে মানবতার কাছে
বিবেক হেরে গেছে।
অন্ধ সমাজে মানবতার পরাজয়,
তাই রাজত্ব আজ শেয়াল-কুকুরের
অস্তিত্ব শুধু হাড়ের।।
----**----
নিরুদ্দেশ শব্দ
-ইন্দ্রাণী কর্মকার
বেশ কিছদিন.......
শব্দের সাথে শব্দের সমীকরণ ঘটেনি।
বল পেনের নীল কালো সবুজ জমাট কালি,
আঁচড় কাটেনি কল্পনার ক্যানভাসে।
সাদা ডায়ারির পাতা আজও প্রতীক্ষায়-
একটু ভালোবাসার
বেলা শেষে, কল্পনা বাসা বাঁধে ব্যালকনির পাশের ছোট্ট ডাস্টবিন এ.....
নিরুদ্দেশ শব্দ বন্ধ রাখে স্বপ্ন আঁকা।
অনুভূতির অধিগ্রহণ
আশার কৃষ্ণগহ্বর এ।।
----**----
- দ্বিতীয় পর্যায়ঃ- গল্প
রাজবংশী ভাষার গল্প “আশুরবাদ”
– কনক রায়
মনটাত কত কি চিন্তা ভাবনা যে, আইসে আর যায়- তাঁর ঠিক ঠিকানা নাই। কুন কুন চিন্তা ভাবনা ভালে ভাবায়। বিনুর মনটাত কত চিন্তা আইসে আর যায়।
একদিন বিনু উয়ার দিদির বাড়ি থাকি ফিরতে ফিরতে কোনেক ভালে আতি হয়্যা গেইছে। আসিবার পথত একখান হাফওয়ালত গাথা একহাত শিবের ফটক দেখির পাইল । এগল্যা দেখিয়া বিনু ভাবিছে আতি হইলে বোধায় বাড়িরগড়ের কাও কাও আসিয়া সইন্ধ্যাবাতি দিয়া যায়, ওটে একটা ধূপদানীও দেখা যায়। লাইটের একটা ব্যবস্থাও করিয়া দিছে ওঠেকার লোকগুলা।
বিনু ভাবে যে, লোকগুলা বোধায় মাঝে মাঝে ভাবে ক্যামন করিয়া ঠাকুরের ঘরটা আরও বড়ো করা যায়। কিন্তু অল্পখানিক পরে ভাবে ঠাকুর যদি দয়া না করে হামরা আর কত করিমো। তামান তো তোমরায় করেন হামরা খালি উপলক্ষ মাত্র।
বিনুর ঠাকুরটাক দেখিয়া খানেক মায়া হইল। বিনু পকেটত হাস্তাইলেক, একটা পাঁচটাকি ডলার পায়্যা ঠাকুরটার গোরত যায়্যা কইল- হ্যাঁ, মুই পাঁচটাকা দিনু। অন্য মাইনসিগুলারঠে যা পাইস নিয়া ঘরটাক খানিক ঠিক করিস। না হইলে বাইস্যালির দিনত খালি জল আর ঠাণ্ডার দিনত খালি হাওয়া খায়্যা থাকবু। আর কাকো পাইলে স্বপন-টপন দেখাইস, না হইলে হবার না হয়। স্বপন না দেখাইলে তোর উপরা মাইনসিগুলার ভয়-ভক্তি চাপিবে কেমন করি। তুই তো জানিস মাইনসিগুলা বিপদত না পড়িলে তোমারগুলার কথা উমারগুলার ফমে না হয়। খালি হাতটা ওঠেয়া চুপ করি থাকিলে হইবে না।
বিনু আরও কইল, বড়ো বড়ো ঠাকুরের থানগুলা তো ঐমতন করিয়ায় হইছে। মাইনসিগুলাক কিছু না দিলে তোক কি মাইনসিগুলা কিছু দিবে রে? এলা যে আরও রাজনীতি চইলছে! তাতে মাইনসিল্যা আরও বেশি চালাক হয়্যা গেইছে। উমরা বুঝির পাইছে তোমার আর আগের মতন শক্তি নাই। সেই জইন্যে উমরাও তোমারগুলার উপর ভরসা ছাড়ি দিয়া ন্যাতাগুলার পাছ ধরিছে। তায় তুই থাক। মোর আতি হয়্যা গেইছে, বাড়ি যাবার নাগে। মুই গেনু।
খানিক ভাবি দেখিস। না হইলে খালি থানটাত হাতটা ওঠেয়ায় থাকবু- আশুরবাদ করিবার লোক পাবু না।।
----**----
আমি এবং অনুপমা
-আবদুল্লা রহমান মিঠুন
আমি বেশ কিছু
দিন ধরেই কলকাতা যাব যাব করছি । এতটা পথ একা
যাব ! এর আগে সেই কবে একবার গেছিলাম কলকাতা ।তখনকার কলকাতার আজকের মতো জৌলুস না
থাকলেও ক্লাসিক ভাব ছিল ।আমি ঠিক করলাম আর কোথাও তো গেলাম না বাংলার বাইরে কলকাতার
রহস্য
ভেদ করে অন্তত বাঙালি হিসেবে আমি বলতে পারবো
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ।"আসলে কলকাতা যে বাংলার মুখ না এটা আমার মতো
দাম্ভিক কে বোঝাবে ?
আমি উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে চাপলাম । এই
তিনটে নাগাদ । একজন সাধারণ যাত্রী হিসেবে জেনারেল কামরায়। আমি বড়ো বিরক্ত
হচ্ছিলাম।আর কতদিন হেরো কমিউনিস্টের ঠাট বজায় রাখবো ।আমার মতো বয়স হবে কিংবা
একটু কম বাবু গোছের এক ভদ্রলোক আনন্দবাজারে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন । আমি ভাব ছিলাম
এবার আর একবার সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়বো মাঠে । এভাবে চলতে পারে না । সারাটা
জীবন পার্টিকেই দিলাম ।এবার শেষ লড়াই । হয় ওরা নইলে আমরা ।এই সব সাতপাঁচ উদ্ভট
চিন্তা পাক খাচ্ছিল মাথায় । এমন সময় সেই ভদ্রলোক আমার দিকে ভালো করে চাইলেন,আমিও চাইলাম তার চোখের দিকে শুভ দৃষ্টি
হয়ে গেল । লোকটা আমার কাছে এসে বসল । তারপর একটা গান ধরলো "আমার সুরের সাথী
আয় রে ।" বুঝতে বাকি রইল না । কে এই বাবু ! আমারই বন্ধু কমলেশ ত্রিপুরারি ।
গল্প শুরু হলো "সুরের সাথী" দিয়ে । আমি ইতিমধ্যে সিগারেট ধরিয়ে জানালার
কিনারে
চেপে গেছি । অনেকদিন বাদে রাজনীতি,সাহিত্য বাদে কিছু বলতে পারছি ধন্য মনে
হচ্ছে নিজেকে । "সুরের সাথী" বলতে আমরা আমাদের প্রেয়সীকে বোঝাতাম ইউনির্ভাসিটি লাইফে ।আজ ব্লক ডিভিশন অফিসে
জয়েন্ট বিডিও
ত্রিপুরারি ওর প্রেয়সীকে নিয়ে সুখেই আছে ।
আর আমার প্রেয়সী বলতে তেমন কেউ সেদিনও ছিল না আজও নেই । আমার প্রেয়সীর চিন্তা
মাথায় গেঁথে গেল । আসলে এতো চাপে ছিলাম বছর পনেরো সব ভুলে গেছি । নিউ মালদা জংশনে
নেমে গেল ত্রিপুরারি । আরও অনেক কথা বলা হয়েছিল সেগুলো বলার মতো না ।
আমার আরও
অর্ধেক পথ বাকি । আর মাথায় কেবল প্রেয়সী ঘুরপাক খাচ্ছিল । ল্যাপটপটা অন করলাম কারো
পোষ্টার বানানোর কথা মনে পড়ল । কে সে ? কে একদিন আমাকে বলেছিল "তুই আমার ছবি
দিয়ে পোষ্টার বানাবি তাই তো "...অনেকক্ষণ বাদে স্মরণে এলো অনুপমা মুখার্জীর কথা
। এই সেই নারী যে আমার সব চেয়ে কাছের মেয়ে বন্ধু ছিল ।কিন্তু সে কোথায় আর আমি
কোথায় ?
কেউ কারো কোনো খোঁজ রাখে নি পনেরো বছর !
এটা কী সম্ভব ?
এসব আজও কী অনুপমার উপস্থিতি পারে আমার
মতো কম্যুনিস্টের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে ? না না পারবে না । আর আমি এসব ভাবছি কেন ? ছি ছি...
ট্রেন সকাল
সকাল ব্যস্ততম রেল স্টেশনে এসে থমকে গেল । এবার নামতে হবে আমাকে । ডিজিটল
ইন্ডিয়াতে সব কিছু বদলে গেছে শিয়ালদহের । লোকের হইচই, আছে ভিড় আছে কিন্তু কোথাও যেন খামতি আছে
একটা । যান্ত্রিকতার কাছে কার যে অসহায় মুখ আমি দেখতে পাচ্ছি ।টিটি আমাকে দেখছে
আমি সেই করুণ মুখের দিকে চেয়ে । তারপর সে ভিড়ে মিলিয়ে গেল । আমিও ট্যাক্সি চেপে
ঘুরতে বেরোলাম । সারাদিনে ঘোরাঘুরি করে রাতে মামার বাসায় ফিরলাম । মামা রেগে গেছেন
সারাদিনে একবারও জানাইনি আমি এখানে এসেছি । অতিথি সম্পর্কে কিছু বলে মামার হাত
থেকে বাঁচলাম । পরেরদিন আমি কলেজ স্ট্রিটে এসে কিছু বই কেনাকাটা করলাম । আর এখানেই
শ্রীমতি অনুপমা মুখার্জী ব্যানার্জীর সাথে দেখা । একটা বছর পাঁচের ছেলে হাতে করে
নিয়ে এসেছে । আমি কিছু বললাম না "ও" আমাকে কিছু বলল না ।আমি চলে এলাম ।
সন্ধ্যের রেলে চেপে বাড়ি ফিরলাম । মুড অফ । গোটা পথে নির্বাক ছিলাম । বাড়ি ফিরে
কদিনের মধ্যে চিঠি পেলাম...নাম ছিল না কারো কিছু লিখা ছিল যার মূল কথা এই
"কথা বলতে পারতিস । আমি ভালো আছি । নামটা হারিয়ে ফেলেছি । তোর সেই আতঙ্ক আজ
নিজেই আতঙ্কে ভোগে । হৃদয় অবাধ্য মেয়েটা আজ সংসারে চাপে বাধ্য হয়ে গেছে ।"
----**----
- তৃতীয় পর্যায়ঃ- কবিতা
বাবা
-প্রবীর বরণ সরকার
তুমিই মাথার উপরের ছাদ
ছায়া
প্রদানকারী বটগাছ।
তোমার
হাত ধরেই হাটতে চলা শুরু,
তুমিই
জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু।
ঝড় বর্ষাতেও
আগলে রেখে
স্নেহ,মায়া,
মমতাতে করেছ বড়ো,
নিদ্রাহীন
নিশিযাপনে-
প্রতিনিয়ত
গড়ে তুলেছ আমার ভবিষ্যৎ ।
কেন
চলে গেলে একলা করে!
না ফেরার
দেশে!
কে বোলাবে
এখন মাথার উপর হাত?
কে বলবে আমায় ‘ছুটে যা –ছাড়ব না তোর সাথ’
কেন
চলে গেলে একলা করে
না ফেরার
দেশে?
বাবা,
তুমিই ছায়া প্রদানকারী বটগাছ।
বাবা,
সত্যিই তুমি
মাথার
উপরের ছাদ।।
----**----
মিঠে রোদ
-ব্রততী সিংহ
মিঠে রোদ,
শীতের বিকেলের মিঠে রোদ;
সকালের-শীতের শেষে,
বিকেলে তোমার সাথে দেখা।
তোমার মিঠে সোনালি রঙ,
আমার একটু বেশি ভালো লাগা।
তুমি যখন কচি পাতা বেয়ে,
আভা আমায় দাও;
তোমার রঙে আমি রাঙি ,
আমাকে তুমি রাঙাও ।
তোমার সাথে লুকোচুরি খেলা;
সঙ্গী আমি, তুমি নও একলা।
শীত বিকেলের তুমি রাণী
মিঠে রোদ, তোমায় আমি,
বড্ড ভালোবাসি।
----**----
মেঘদূত
-মৌমিতা পাল
যদি কখনও মনে
পড়ে,
বার্তা পাঠাস
আমায়।
একখানি চিঠি
লিখে
ছুড়ে দিস
মেঘের দিকে।
আমাদের
কথোপকথন রইবে অন্তরালে,
জানবে না কেউ
কোনোদিন।
অলক্ষে থাকবো
আমি।
উত্তর পাঠাবো
মেঘের ঠিকানায়
যেমন
পাঠিয়েছিল নির্বাসিত যক্ষ।
আজ তো আমরাও
নির্বাসিত-
বিধাতার অভিশাপে।
আমাদের কথা
না হয় কেবল মেঘদূতই জানুক।
কি হবে তাতে?
এতো আর ভুল
নয়
সমাজের
চক্ষুলোকে।
----**----
----**----
নীরার জন্য
- আসলাম হোসেন
আরও একবার ঘুম ভাঙানি
নীল ময়ূরের ডাক,
আরও একবার নীল শরীরে
কালো ভ্রমরের হাত।
আরও একবার সবুজ ঘুমে
জাফরানী এক স্বপ্ন,
আরও একবার বাঁচতে চেয়ে
মরেছি তোমার জন্য
....**....
- চতুর্থ পর্যায়ঃ- গল্প
-মমিদুল মিঞা
দার্জিলিং মেল পৌনে নটায় শিয়ালদায় এসে পৌছাল। প্লাটফর্মের বাইরে পা রাখতেই শুরু হল তীব্র আলোর ঝলকানি, উত্তরের থেকে
সম্পূর্ণ আলাদা।বেশ
গা-জুড়ানো। এত কিছুর মাঝেও মৃদু
মন্দ বাতাসে অমিল পেলাম উত্তরের সাথে। অটো স্ট্যান্ডে জমে উঠেছে ততক্ষণে ব্যাস্ততম
শহরে যাত্রীদের কোলাহল। উঠে পড়লাম অটোতে। অনুভব করলাম, এরা সবাই কত সুন্দর অল্পতেই
সুখি থাকে, কিন্তু আমাদের ওখানে......ঠিক সবই যেন আগের মতই আছে।
অটো চলছে শিয়ালদা ট্রাফিক মোড় ক্রস করে।মাঝে দু একটা জায়গায় যাত্রী নামল,
চলছে যাত্রীর অবিরত ওঠানামা। এসবের মাঝেও একা নামলাম, শেষ সেই বেলেঘাটা বাইপাশে।
অনেকদিন পর হলেও বাইপাশ আমাকে চিনতে পেরেছে। ভেবে আস্বস্ত হলাম, বুঝলাম ট্রাফিক
সিগনালেও।
ডোরাকাটা খোপ গুলো পাড় করে পৌঁছে গেলাম ওপারে।চলেছি চিংরিঘাটার দিকে।
যাদবপুরের ক্যাম্পাস, মিনি বাইপাশ,চা লুচির কারখানা পিছনে ফেলে দ্রুত চলছি। চোখে
পড়ল অর্ধনগ্ন একটি ছেলে এদিকেই ছুটে আসছে। বগলে কিছু কাগজ। থমকে গেলাম। কোথাও
দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায়! টাউনে না জংশনে! মনে পড়ছে না। এগিয়ে চললাম।
হঠাত মনে হল কেউ ডাকছে আমাকে পিছন থেকে। মুখ ফিরিয়ে দেখলাম- সেই ছেলেটিই;
বলছে, “ ও বাবু,বাবু! নিন না একটা কাগজ। অনেকটা বেলা হল কিছু খাইনি। বাবু নিন না একটা পত্রিকা...”
হতভম্ব হয়ে রইলাম। কোট পরা উকিলবাবুটি বললেন “ছাড়ুন মশায় ওসবে কান দেবেন
না, এটা ওদের রোজকার ব্যাবসা।” ব্যাস্ততার ভিড়ে হারিয়ে গিয়েও শুনতে পেলাম “ও বাবু
আপনি শিলিগুড়ি থেকে আসছেন তো!” এগোতে পারলাম না, কানে এলো “একটা কাগজ... আচ্ছা না
হয় ওখানকার একটা পত্রিকাই নিন, খুব অল্প দামে...নিন না বাবু”
রাতের পর আমারও আর খাওয়া হয়নি, পেটের মোচড়টা বুঝতে পারলাম। তাড়াতাড়ি কাগজ
পত্রিকা নিয়ে কোম্পানির মেসে উঠলাম।
রাত অনেক হয়ে গেছে, মনে হল
অবসর সময়ের বিনোদনে মন বসাবো পত্রিকায়। কগজের ভেতর থেকে বের করলাম, কিন্তু এ কি! এ
কোন পত্রিকা! কাগজটা সরিয়ে দেখতে পেলাম বড় বড় অক্ষরে লেখা নাম –“অচিন পাখি” প্রথম
বর্ষ।
....**....
- পঞ্চম পর্যায়ঃ- কবিতা
নিরুপায়
-মমতা রায়
তাদের কি ইচ্ছে করে না - স্বাধীনভাবে বাঁচতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - ব্যাগভর্তি বই নিয়ে স্কুলে যেতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - মাস্টার,
প্রফেসর SDO BDO IPS হতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - দামী দামী জামা পড়তে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - নামী দামী হোটেলে চিকেন বিরিয়ানী পোলাও খেতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - অন্য বাচ্চাদের মত বাবা-মার হাত ধরে আনন্দ মেলাতে যোগ দিতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - পাশ দিয়ে যাওয়া বড়লোক বাবা-মার মত নিজের বাবা-মাকে সাঁজাতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - নরম বিছানায় একটু শান্তির ঘুম দিতে?
তাদের কি ইচ্ছে করে না - ব্যান্ডেড গাড়িতে চেপে অন্যদের মতো ঘুরতে?
ইচ্ছে ত করে সবই কিন্তু মনে হয় তাদের জন্মটাই অভিশপ্ত,
তাই তো তাদের জীবন রাস্তা বাসস্ট্যান্ড আর প্লাটফর্মের মধ্যে সমাপ্ত।
তাদের কি অপরাধ ছিল বলতে পার তোমরা?
জন্মের পরের দিন থেকে হাত পেতে করছে শুধু মানুষের কাছে আনাগোনা।
কত গালি - গালাজ খারাপ কথা শুনতে হয় তাদের,
তবুও তার থেমে থাকে না একমুঠো খাবারের জন্যে।
তাদেরকে নিয়ে ভাবার মতো সময় নেই কারো,
উন্নত দেশে নিজেকে উন্নত করতে সবাই তো ব্যস্ত।
আজ আমি নিরুপায় ----
উন্নতশীল দেশে থেকেও দিতে পারি না তাদের ইচ্ছের দাম।
....**....
পঁচিশ টাকার ব্যবসায়ী
-অজয় গায়েন
হাসি পায়, দেখলে আমার মুখোশধারী সভ্যদের...!
কাজ দেওয়ার নাম করে শারীরিক উপত্যকায় আঁচড় মারে,
পেটের জ্বালায় জান চলে যায় মান থাকে তাঁর কিসের জোরে !
উপায় নেই, সভ্যদের পঁচিশ টাকায়,
পেট বাঁচালাম নগ্নতায়...!
সমাজের নেতা তাঁর আবার বড়ই নেতা-
অনেক বেশি আদর চাই,
চাইলে টাকা, বলে তুই তো পঁচিশ টাকার ব্যবসায়ী ভাই।
সভ্যরা বলে পরকীয়া নাকি আইনে চলে।
ফের যখন বাচ্চা এলো, তাঁর দায় কে নিল?
সবাই বলে নুন ঢেলে দে।
আমি বুঝিনা ভাই সমাজের মান
আমি বুঝি পেটের টান।
আমি যে পঁচিশ টাকার ব্যবসায়ী ভাই
আমি শুধু দুবেলা ভাতের ব্যবস্থা চাই।
...**...
বিষাদ
– রসিক সুজন
আমলকীর পাতা খসাড় মতো নিঃশব্দে
বেঁড়েছে মোর বেদনাটুকু
ছাইচাপা আগুনে।
তোমাকে আপন করার আশায়
হাঁটু কাপানো জ্বর
থর- থরনিথর মন।
ছন্দরাশির জপমালা গাঁথিনু শতপড়াতে গলায়,
ছিড়ে গেল তান, বেসুর বাগানফুলহীন মোর মনের আলয়।
চন্দ্র বাড়ির যত রক্তজবাপাতাহীন সব শুকিয়ে কাঠমোর নবমী নিখাদ।
প্রেমিকার লাগি যে কবি
রচিল কবিতা রাশি রাশি
,
সে আজ ভিখারী
অকুল পারাপারে।
নাহি নাহি আর জীবনের স্বাদএ জীবন ভরে,
বিষাদময় আজি এ
জগৎসংসার।
...**...
- ষষ্ঠ পর্যায়ঃ- গল্প
নূপুর
-মহাদেব
বর্মন
অনেক দিন
ধরেই লেখালিখি করি না । বর্তমান এই উন্নত টেকনোলজির যুগে একটা প্রহরও অবসর দেয় না
। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যপ ইউটিউব এখন একটা মুহূর্তের জন্য অখুশি রাখে না। বন্ধুরা
পত্রিকা প্রকাশ করবে তাতে লেখা দিতে হবে হঠাৎ করে কিযে লিখি বুজেই উঠতে পারছিনা আর
কি বিষয় নিয়েই লিখব। বর্তমানে যার ফেসবুক আছে তার তো বন্ধুর অভাব নেই।তবুও দেখি
স্ট্যাটাস অনেকে দেয় মুহূর্তে মধ্যেই বন্ধুরা তার দুঃখকে ভাগ করে নেয়, এতজন ভাগ করে নেয়, যে দেয় শেষে তারই পেতে হয়তো দুঃখ জুটে না।
চলো এত বিনোদনের মাঝেও আপনাদের একজনের প্রেমের কাহিনী শুনাই। রাত 8টা বাজে , এনজেপি স্টেশন থেকে 30 মিনিট পরে ট্রেন ছাড়বে। ঘাড়ে একটি ব্যাগ
আর হাতে একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে অজয় ট্রেনে উঠল কলকাতা যাবে । এই নিয়ে অজয়ের
দ্বিতীয় কোম্পানি তে যোগদান। কোম্পানির দেওয়া রেল টিকিটে অজয়ের আপার লোয়ারে সিট
পড়েছে। আগের কোম্পানির তুলনায় নতুন কোম্পানির পোস্ট ও বেতন দুইটাই ভালো। ট্রলি
ব্যাগ টি নিচের সিটের তলায় রেখে দিয়ে অজয় বসে রইল। কিছুক্ষন পরেই তার লোয়ারের
যাত্রীরা উঠল। অজয় তার আপার সিটে উঠতে যাবে, এমন সময়ে এক যাত্রী বলে উঠল ;আপনি বসতে পারেন কারন এই সিটের যাত্রী এখন
উঠবে না তারা কিষানগঞ্জ স্টেশনে উঠবে। অজয় ঘুমায় রাত বারোটায় , তাই বসে রইল। বাকি যাত্রীদের কথাবার্তা
শুনে অজয়ের মনে হলো তারা দল বেঁধে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে , কিষানগঞ্জ থেকেও তাদের দলের যাত্রী
উঠবে।রাত এগারো টা বাজে এইবার অজয় তার নিজ আপার সিটে গিয়ে উঠল। মোবাইলে ফেসবুকে
স্ট্যাটাস দেখছে,
সারা দিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত শরীর পনে
বারোটা বাজলে ঘুমে তার চোখ সুরু হয়ে আসছে তাই মোবাইলের স্কিন টা অফ করে দিয়ে চোখ
বন্ধ করে রইল। রাত বারোটায় ট্রেন থামল শুনশান কিষানগঞ্জ স্টেশনে। আবছা ঘুমের
মধ্যেই অজয়ের বুজতে অসুবিধা হলো না যে এটাই কিষানগঞ্জ স্টেশন, এই স্টেশন থেকেই তার নিচের লোয়ারের দুইজন
যাত্রী উঠবে। সেই দুইজন যাত্রীর একজনের পায়ের নুপুরের ঝুন ঝুন আর চুরির টংটাং
শব্দে হটাৎ অজয়ের ঘুম ভেঙে গেল। সেই নুপূরের শব্দ ক্ষনিকের মধ্যেই অজয়ের গায়ে
কাঁটা দিয়ে উঠল। কিছু ঘটনা রয়েছে যার আভাস পেলেই গায়ে কাঁটা ফুটে উঠে।তেমনি অজয়ের
জীবনে কিছু ঘটনা রয়েছে যা পায়ের নুপূরের শব্দ পেলেই অজয়ের গায়ে কাঁটা ফুটে উঠে।
কিন্তু আজ এই পায়ের নুপূরের শব্দ তার খুবই চেনা মনে হচ্ছে।নিচ থেকে বার বার
নুপূরের শব্দ কানে আসায় অজয়ের মন কে আবেগতাড়িত করে তুলেছে। নুপূরের ঝুন ঝুন শব্দ
অজয়ের মনে তীব্র হাহুতাশে পরিনিত করছে ,তার চারপাশ থেকে চেনা মানুষ গুলি তাকে যেন
দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তার কানে কানে কেউ এসে যেন বলছে কি অজয় তুমি সুখি নও। তার
স্মৃতি পটে ভেসে উঠছে দুইবছর আগের সেই দিন টার কথা। যে দিনগুলি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা
করে কিন্তু ভুলতে পারেনা । আসলে ভুলতে চাওয়ার ভুলটাই বারে বারে ভুলে যাওয়া
মুহূর্তকে মনে করে দেয়। নুপূরের শব্দে অজয়ের মন কেন এত শূন্যতায় পরিণত হচ্ছে ! কেন
তার মনে হচ্ছে সব কিছু থাকার সত্ত্বেও যেন সব হারিয়ে যাচ্ছে!
আচ্ছা চলো
তোমাদের সেই দিনটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই ।
অজয় তখন
গ্রাজুয়েশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র,খুব কাছের এবং খুব প্রিয় বন্ধু হলো তার
সহপাঠী বর্ণালী। কলেজের প্রথমদিন থেকে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, যতই দিন যায় ততই তাদের বন্ধুত্বের গাঢ়ত্ব
বাড়তে থাকে। পরানো চাল যেমন ভাতে বাড়ে তেমনি তাদের বন্ধুত্ব যতই দিন যায় ততই গাঢ়ত্ব
বাড়তে থাকে। অনেক সফল ও ব্যর্থ প্রেম যেমন বন্ধুত্ব থেকে সৃষ্টি হয় তেমনি অজয় আর
বর্ণালীর বন্ধুত্ব প্রেমের পর্যায়ে কখন যে উত্তীর্ন হয়ে গেছে তারা বুজতেই পারেনি।
ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা অর্থাৎ নিজের থেকে তার হয়ে যাওয়া---কখন যে এই ভালোবাসা
সম্পর্কটা তৈরি হয়ে যায় বুঝা মুশকিল। অজয় যখন বুঝতে পারে বর্ণালী কে ছাড়া কিছুই
ভালো লাগছে না,
পর্নিমার রাতের চাঁদের সৌন্দর্য বর্ণালীকে
ছাড়া পরিপূর্ণতা পায় না। সেদিন আর দেরি না করে অজয় ফোন করে বর্ণালীকে-----বর্ণা ঘর
থেকে বের হয়ে চাঁদকে দেখ একটু আমি জানি আজ পূর্ণিমা অনেক দেখেছি পূর্ণিমার চাঁদ , তার আগে বল কেন তুই আগে বের হ তারপর বলছি
আচ্ছা বের হয়েছি এইবার বল পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কত সুন্দর না হ্যাঁ তা তো সুন্দর
কিন্তু আজ হঠাৎ করে এই প্রশ্ন!বর্ণা আমার কিন্তু ভালো লাগছে না , জানিস কেন?এই যে পূর্ণিমার চাঁদ এত সুন্দর তার
সৌন্দর্য আমি যে অনুভব করছি তা ব্যক্ত করার জন্য এক জন মনের মানুষকে পাশে চাই, যদি ব্যক্তই করতে না পারি তাহলে সেই
সৌন্দর্য এর কোনো মূল্য আছে বাহ: আজ যে এত কবিত্ব কোথায় থেকে তোর কাছে আসল কবিত্ব
নয়রে অভাব ,অভাব টাই আজ বড় করে দেখা দিচ্ছে তর আবার
কিসের অভাব পূর্ণিমার চাঁদকে দেখার জন্যে একজন কে পাশে লাগে সেই পাশে থাকার
মানুষটির অভাব বুঝেছি বাপু প্রেমে পড়েছে তা পাশে কাকে নিয়ে চাঁদ দেখতে চাস
বর্ণালীর কাছ
থেকে এই কথা শুনে অজয় অনেক্ষন ধরে চুপ করে ছিলো ,ফোনের ওপারে বর্ণালীও অধীর আগ্রহে চুপ করে
ছিল অজয় কার নাম বলে। মনে একটা চাপা আশঙ্কা নিয়ে অজয় বলেই ফেলে সে আর কেউ নয়
পূর্ণিমার চাঁদ কে দেখার জন্যে আমি তোমাকে চাই
এই বলে অজয়
বর্ণালীকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দেয়। সেই সময় অজয় দৌড়ে ঘরে এসে
আবেগে বালিশে মুখ চাপা দিয়ে রাখে আর মনে ভিতরে যেন লজ্জা আর আশঙ্কা দৌড়াদৌড়ি করতে
লাগল। অপর দিকে বর্ণালীও যে অজয় কে ভালোবেসে ফেলেছিল, তাই অজয়ের কাছ থেকে তা শুনে হা করে তাকিয়ে
ছিল সেইদিনের পূর্ণিমার চাঁদের দিকে। আর অপেক্ষা করে আছে অজয়ের ফোনের। কিন্তু
এইবার অজয় ফোন করেনি করেছে মেসেজ।কাল কলেজে তোমাকে একটি উপহার দিব যদি তুমি নেও
তাহলে বুঝব হ্যাঁ আর যদি না নেও তাহলে তুমি তুই এর মধ্যেই থাকতে চাও
পরের দিন
কলেজে অজয় একটি জনশূন্য গাছতলায় গিয়ে বর্ণালী কে আর দশজন প্রেমিকের মতো করে নয় সে
এক জোড়া পায়ের নূপুর প্যাক করে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সেই দিন থেকে তাদের
বন্ধুত্বে উপর প্রেমের অলংকার জুড়ে যায়। তারপর থেকে কোনো দিন বর্ণালীকে নূপুরহীন
পায়ে চলতে অজয় দেখেনি...
----**----
- বিশেষ কলমেঃ -
-বিকাশ নার্জিনারী
হৃদয় যন্ত্রের পাসওয়ার্ড
কাউকে যদি দিয়ে থাকো
.................................
.................................
দুখী হওয়ার কোন কারণ নেই
পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিবে ।
*************************
মোহ এর সঙ্গে তুমি আড়ি পাত,
যন্ত্রনা তোমায় ছেড়ে চলে যাবে ।
অভ্যাসকে কর তুমি কুড়াঘাত ,
ছোট কিছু হারানোর ভয় তোমায় দেবে-
বড়ো কিছু পাবার সাহসী বার্তা ।
*****************************
আত্মঘাতী সে তো প্রেমের মৃত্যু
কিছু বিষাদঘন স্মৃতি
যা শুধু আপনজনের
জন্য রেখে যাওয়ামাত্র
তাঁদের ভাবনার কল্পনাবল
আর কল্পনাবিলাস
আজ ছিল আশাহীন
অতৃপ্তির শেষ নিশ্বাস
প্রেমের অপার মহিমাময়ী
তাদের জানতেই দিলে না
বর্তমানের
আর্তনাদধ্বনি
আর..........
অতীত-ভবিষ্যৎ
তাদের জন্য দেওয়া ত্যাগ
আপনজনের ভাগ্যোদয়
সব শুনি.... সব শুনি...
আপন জন্যের ভাগ্যশক্তি
এক নিমেষেই কিনারাবিহীন
জলছবি,,,,,
হায়! মানব সহৃদয়া...।।
(চলবে)
----**----
"অচিন পাখিদের লালন করুন; অচিন পাখিদের সঙ্গে থাকুন। বিদ্রোহ-প্রতিবাদ এবং ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকুক বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি।।"
"ধন্যবাদ"
................***................
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteনতুন বছরে উপহার হিসেব পত্রিকাটি খুবই ভালো লাগলো। এগিয়ে যাবে'অচিন পাখি' চেনা কোন নীড়ের সন্ধান পেতে, মমিদুল দা'র সেই 'নাম' লেখাটির মতো।লেখাগুলি খুব সুন্দর পড়ে ভালো লাগলো। আর আব্দুল্লা'র লেখাতে কোথাও যেন খুব চেনা মুখগুলোকে দেখলাম।
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই
Deleteপড়তে যদিওবা একটু দেড়ি করে ফেললাম,,তাতে কিছু সমস্যা হয়তো হবে না,,তবে সবার প্রথমে 'অচিন পাখি' সম্পাদক মহাশয়দের নতুন বছরের শুভেচ্ছা এবং অনেক অনেক ভালোবাসা জানাই,,কারন তাদের এই প্রচেষ্টা শুধু নিজের ভাবনাকে আলোড়িত করেনা,,তা যেন বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতিকেই আলোড়িত করেছে,,,তাদের প্রচেষ্টা ও ক্লান্তিকে যারা একটু মূল্যবান সময় দিয়ে দেখেছেন এবং পড়েছেন তাদেরকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন,,,
ReplyDeleteতবে পত্রিকা প্রসঙ্গে আমার কিছু বলার আছে,,তাই বলে সমালোচনা নয়,,বন্ধুবর আমার মনে হয়েছে মহাদেব বাবুর গল্প 'নূপুর'-এ বিরাম চিহ্নের দিকে হয়তো একটু অসাবধানতা কাজ করেছে,,যার ফলে গল্পপাঠে পাঠকদের মূলভাবের সঙ্গে পরিচয় হতে একটু সমস্যা হয়েছে,,,আশা রাখবো পরবর্তী সংখ্যায় তা কাটিয়ে উঠবেন,,,
সেই সাথে অচিন পাখি'র সকল কবি ও লেখকের প্রতি রইল নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা,,আগামীর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম,,,,
দুঃখিত,,নিজের পরিচয় দিতে না পেরে,,আমি "স্মৃতির পাতা"....
Deleteধন্যবাদ,আপনার মূল্যবান মতামতে 'অচিন পাখি'রা গর্বিত।।
Deleteআপনার মন্তব্যই ঠিক করবে,আশা জোগাবে নূতন পাখি'দের।শুভেচ্ছা আপনাকেও
খুব ভালো।
ReplyDeleteকি করে লেখা পাঠাতে হবে একটু বলবেন
লেখা পাঠাতে আমাদের পত্রিকার ঠিকানায় ই-মেল করুন....achinpakhiemagazine99@gmail.com
ReplyDelete